১লা রবিউল আউয়াল দয়াল রাসূল পাক (সঃ) এর ওফাত অর্থাৎ জাহেরী জগৎ থেকে পর্দা নেন।

দশম হিজরি ৯ জ্বিলহজ্ব বিদায় হজ্বের পর দয়াল রাসূল পাক (সঃ) ধরাধামে ৮১ তম দিন জীবিত ছিলেন। অর্থাৎ ১লা রবিউল আউয়াল মাসের সোমবার আছর নামাজের পর এবং মাগরিব নামাজের আগে পর্দা নেন। (সূত্র : তাফসীরে মারেফুল কুরআন।তাফসীরে দুররে মানসুর ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা নং ২০। তাফসীরে তাবারী ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা নং ৮০। তাফসীরে মাযহারী ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা নং ২৫। তাফসীরে ইবনে কাসীর ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা নং ১৩)।

এবার আসুন হিসাব করি। ৯ই জ্বিলহজ্ব থেকে ৮১তম দিন কত তারিখ এবং কি বার পড়ে। জ্বিলহজ্ব মাসের ২১দিন, মহররম মাসের ২৯দিন, সফর মাসের ২৯দিন এবং রবিউল মাসের ১তারিখ মিলে মোট ৮১তম দিন হয়। অর্থাৎ ২১+৩০+২৯+১ =৮১তম দিন হয় ১লা রবিউল আউয়াল সোমবার।

আরবী মাসের তারিখ মাগরিবের আজানের পর পরিবর্তন হয়। আর রাসূল পাক (সঃ) ১লা রবিউল আউয়াল মাগরিব আজানের কিছু আগমুহূর্তে পর্দা নেন। তখন কিছু সংখ্যক সাহাবী উপস্থিত ছিলেন, তারা লিখে রাখে ১লা রবিউল আউয়াল। আর অধিকাংশ সাহাবী রাসূল পাক (সঃ) পর্দা নেওয়ার পর সংবাদটি পায় সন্ধ্যার পর। তাই তাঁরা লিখে রাখে ২রা রবিউল আউয়াল। পরবর্তীতে হাদিস বর্ণনাকারীগন ১/২ লিখে রাখে অর্থাৎ ১ অথবা দুই। এখানে উল্লেখ্য বিষয় হলো ১লা রবিউল আউয়াল ছিল সোমবার এবং ১২ইং রবিউল আউয়াল ছিল সোমবার। ১২ই রবিউল আউয়াল রাসূল পাক (সঃ) এর  জন্ম অর্থাৎ আগমনের দিন, এই বিষয়ে কারোর দ্বিমত নেই। তাই পাপিষ্ঠ ইয়াজিদ ক্ষমতায় এসে অবলিক উঠিয়ে দেয়, তখন সরাসরি ১২ই রবিউল আউয়াল হয়ে যায়। যাতে মুসলিম জাতি ১২ই রবিউল আউয়াল দিনে রাসূল পাক (সঃ) এর জন্ম অর্থাৎ আগমনের দিবস মহা ধুমধামের সাথে পালন করতে না পারে। এটা ছিল অতি সূক্ষ্ণ কৌশল, যার জন্য মুসলিম জাতি দ্বিধাবিভক্তি হয়ে পড়ে। কারণ আপনি যদি দয়াল রাসূল পাক (সঃ) এর জন্ম অর্থাৎ আগমনের দিন আনন্দের সহিত পালন করতে চান, তখন বলা হবে এইদিনে তো রাসূল পাক (সঃ) ওফাত লাভ করছেন। তাই এই দিন আনন্দের নয় বরং অতি কষ্টের আর কষ্টের দিনে আনন্দ করা যায় না। আবার আপনি যদি এই দিনে শোক দিবস পালন করতে চান, তখন বলা হবে এই দিনে তো দয়াল রাসূল পাক (সঃ) জন্ম নিয়েছেন। সুতরাং আনন্দের দিনে শোক দিবস পালন করা যায় না। ইয়াজিদ এমন কৌশল করে রেখে গেছে, যাতে আমরা দুটির একটিও পালন করতে না পারি। মূলত পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) কে পন্ড করার জন্যই এমন সূক্ষ্ণ কৌশলে রাসূল পাক (সঃ) এর ওফাত দিবস ১২ই রবিউল আউয়াল করা হয়।

অথচ খ্রীষ্টানরা হযরত ঈসা নবী (আঃ) এর জন্মদিন মহা ধুমধামের সহিত পালন করে ২৫ শে ডিসেম্বর। আবার হিন্দুরা শ্রী কৃষ্ণের জন্মদিন এবং বৌদ্ধরা গৌতম বুদ্ধের জন্মদিন মহা ধুমধামের সহিত পালন করে। শুধু একমাত্র মুসলিম জাতির বেলায় এতো দ্বিধাবিভক্ত। দয়াল রাসূল পাক (সঃ) ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। যার তুলনা সৃষ্টি জগতের কেউ নেই এবং হতেও পারবে না। যাকে সৃষ্টি করা না হলে আল্লাহ জগতে কোনকিছুই সৃষ্টি করতেন না। অথচ আমরা যখন সেই মহামানবের শুভ আগমনের দিন আনন্দের সহিত পালন করতে যাই,তখনই আমাদের স্বজাতি মোল্লারা আমাদেরকে কাফের, ভন্ড ও বিদআতি ফতোয়া দিয়ে দেয়। রাসূল পাক (সঃ) এর শুভ আগমনের দিনে শয়তান চিল্লাইয়া কান্নাকাটি করেছিল এবং আজও সেই শয়তানের অনুসারীরা রাসূল পাক সঃ এর শুভ জন্মদিনে আমাদেরকে কাফের, ভন্ড এবং বিদআতি ফতোয়া দিয়ে দিচ্ছে। কারণ তারা রাসূল পাক (সঃ) এর শুভ আগমনে খুশি নন। নচেৎ এমন ফতোয়া দেওয়া সম্ভব নয়। বড়ই আজব মুসলিম জাতি। এদেরকে আমার কিছু বলার নাই। আমরা আহলে বায়াতের গোলাম আশেকে রাসুলরা দয়াল রাসূল পাক (সঃ) এর শুভ জন্মদিনে মহা ধুমধামের সহিত পালন করছি এবং শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত পালন করে যাব। পৃথিবীর কোন শক্তি আমাদেরকে থামিয়ে দিতে পারবে না। যতই ফতোয়া দিন, আমরা এগুলোর দিকে ভ্রক্ষেপ করি না এবং করবো না। যদি নিশ্চিত জাহান্নামে যেতে হয়, তবুও আমরা দয়াল রাসূল পাক (সঃ) এর শুভ জন্মদিন মহা ধুমধামের সহিত পালন করব। আর সমস্বরে স্লোগান দিব

" সৃষ্টি কুলের শ্রেষ্ঠ ঈদ দয়াল রাসূলের শুভ জন্ম ঈদ "।

" পাপী-তাপীর মুক্তির দিন দয়াল রাসূলের শুভ জন্মদিন "।

" দয়াল রাসূল তোমার কদমে ঠাঁই চায় অধমে "।

কিতাব : সূফী সম্রাটের যুগান্তকারী ধর্মীয় সংস্কার। লেখক : সূফী সম্রাট হযরত শাহ দেওয়ানবাগী (রঃ)।

নিবেদক : অধম পাপী মোজাম্মেল পাগলা।