Gazirparians (গাজিরপাড়িয়ানস্)

  1. গাজিরপাড়_গ্রাম_নামকরণের_ইতিহাসঃ-
  1. তার আগে গাজি-কালু সম্পর্কে দুটো কথা বলা দরকার মনে করছি-

যাদের আধ্যাত্মিক প্রভাবে নাকি প্রাচীনকালে বাঘ-কুমির একঘাটে জল খেতো, সেই গাজী, কালু, চম্পাবতী’র রয়েছে এক সুন্দর প্রণয়ের কাহিনি। কেউ কেউ এটাকে বেহুলা লক্ষ্মীন্দারে মতো পৌরাণিক প্রেমের কাহিনি বলেও মনে করেন। তবে এর ভিন্নতা পেয়েছে হিন্দু-মুসলিম নারী-পুরুষের প্রেমের বিশেষত্বে।

গাজী, কালু ও চম্পাবতী’র পরিচয় নিয়ে রয়েছে নানা মুখী কথা। প্রচলিত আছে বৈরাট নগরের রাজা ছিলেন দরবেশ শাহ সিকান্দর। তারই সন্তান বরখান গাজী। আর কালু ছিলেন রাজা দরবেশ শাহ সিকান্দরের পালিত পুত্র। পালিত পুত্র হলেও বরখান গাজীর সাথে পালিত ভ্রাতা কালুর ছিলো দহরম মহরম সম্পর্ক।এই দারুণ ভাবের যুগলের মাঝে সঞ্চারিত হয়েছে অকৃত্রিম ভালোবাসা,শক্তি ও বিশ্বাসের। রাজা শাহ শিকান্দার খান ও রানি অজুপা সুন্দরীর প্রাপ্তবয়স্ক পুত্র বরখান গাজীকে রাজ্যভার দিতে চাইলেন। কিন্ত রাজ্যভার না নিয়ে পালক ভ্রাতা কালুকে সঙ্গে নিয়ে সুন্দরবনের দিকে পালায়ন করেন। তারা ফকির বেশে বহুদেশ ভ্রমণ পূর্বক ব্রাহ্মণ নগরের মুকুট রাজা রাম চন্দ্রের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পরেন। এবং দুই ভাই রাজা রামচন্দ্রকে পরাস্থ করে ছাপাই নগর শ্রীরাম রাজার দেশে চলে আসেন। ছাপাই নগরই আধুনিক বারোবাজারের একাংশ।

চম্পাবতী ছিলেন তৎকালীন সামন্ত রাজা রামচন্দ্র ওরফে মুকুট রাজার মেয়ে। হিন্দুরাজার মেয়ের প্রেম গাজীকে ভুলিয়ে দিল সে মুসলমান। "Love knows no law" প্রেমতো আর ধর্ম-জাত মানে না। যাই হোক, ঘটনাচক্রে চম্পাবতীর ভালোবাসার টানে গাজী ছুটে গিয়েছিলেন ছাপাই নগর(বর্তমানে বারোবাজার নামে পরিচিত)। ছাপাই নগর চলে আসার পর গাজীর সঙ্গে কালুও ছিলেন।

ছাপাই নগরের বলিহর বাওরের তমাল গাছ তলায় গাজী নিয়মিত অপেক্ষা করতেন চম্পাবতীর জন্য। এখানেই দেখা হতো প্রেমিক যুগলের। এদিকে মুকুট রাজা রামচন্দ্রতো রেগেমেগে আগুন। গাজীকে শায়েস্তা করতে ভার দিলেন তার সেনাপতি দক্ষিণা রাওকে। তবে সেনাপতি দক্ষিণা রাও যুদ্ধে পরাজিত হয়ে গাজীর কাছে ইসলাম ধর্মের দীক্ষা নেন। অন্যদিকে রাজা রামচন্দ্র যুদ্ধে পরাজিত হয়ে চলে যান ঝিনাইদহের বাড়িবাথানে। পিছু পিছু বরখান গাজীও গেলেন। বরখান গাজির সঙ্গী হিসেবে এবার কালু এবং নওমুসলিম দক্ষিণা রাও-ও আছেন। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত চম্পাবতীকে উদ্ধার করে নিজের বাড়ি নিয়ে আসলেও রাজা সিকান্দর ওরফে জাফর খাঁ গাজী মেনে নিতে পারলেন না তাদের ভালোবাসা। তিনি গাজীকে তার বাড়িতে উঠতে তো দিলেনই না,বরং বিতাড়িত করলেন।

প্রেমের জন্য দরবেশ হলেন গাজী। চম্পাবতীকে নিয়ে পথে নামলেন। ঘুরতে ঘুরতে একসময় গাজীর আস্তানা হয় সুন্দরবন এলাকায়। সেখানে তাদের সঙ্গী যথারীতি কালু ও দক্ষিণা রাও ছিলেন। এখানে অসাধারণ আধ্যাত্বিক শক্তির প্রভাবে ইসলাম প্রচারে আত্ম নিয়োগ করেন।

তাদের মাজার রয়েছে বর্তমান ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার বারো বাজারে। বারো বাজারের গাজী, কালু ও চম্পাবতী’র মাজারের পাশে আরেকটা কবর রয়েছে। ধারণা করা হয়, সেই কবরটি রামচন্দ্রের সেনাপতি নওমুসলিম দক্ষিণা রাওয়ের।

  1. গ্রামের_নাম_গাজিরপাড়_কেন?

গাজী বা তার পালিত ভ্রাতা কালু কখনো এই গ্রামে এসেছেন তার কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায়না। তবে ধারণা করা হয়, গাজী,কালু ভ্রাতাদ্বয়ের কোন ভক্ত এই জনপদে(বর্তমান গাজিরপাড়) দ্বীন প্রচারের কাজে এসেছিলেন। এবং তিনি আস্তানা গেড়েছিলেন গ্রামের উত্তর-পূর্ব দিকটাতে। সেখানে সেই সময়ে বড়ো একটা পুকুর ছিলো(যা বিলুপ্ত প্রায়) এবং তার পাড়ে বসে ভক্তরা গাজি-কালুর পক্ষে/নামে গুনকীর্তন করতেন,ইসলাম প্রচার করতেন। যেহেতু তারা গাজীর নামেই পরিচিত হয়েছিলেন তাই ধিরে ধিরে মানুষের মুখে মুখে অত্র এলাকাটির নাম হয়ে যায় গাজির এলাকা কালক্রমে গাজিরপাড়। সময়ের ব্যাবধানে সরকার প্রশাসনিক কাঠামোগতভাবে উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে এলাকাটির আয়াতন,জনসংখ্যা বিবেচনায় গাজিরপাড়কে একটি গ্রাম হিসাবে গঠন করা হয়। কথিত আছে,গাজীর সেই ভক্ত বা পক্ষের প্রচারকের হাতে এক খানা লাঠি ছিলো যাহা আশা/ গাজির আশা/নিশানা হিসাবে সবাই কদর করতো। আর এজন্যই পুঁথি সাহিত্যে কিংবা পালাগানে বলা হয়; " আশা হাতে তাজ মাথায় সোনার খড়ম পায়,

 বিসমিল্লাহ বলিয়া গাজী ফকির হইয়া যায় "

তবে এই নাম করণে কিছু সংখ্যক জনবসতি বলছেন ভিন্ন কথা, এক যুদ্ধজয়ী লোক এই গ্রামে বসবাস করতেন। যুদ্ধজয়ীকে যেহেতু গাজি বলা বলা হয়, তাই তার নামানুসারে গাজিরপাড় করা হয়েছে। এই তথ্যটি দুর্বল। আর গাজিকালুর ভক্ত এই গ্রামে বহুকাল থেকেই ছিলো এখনো আছে। গাজিরপাড়ের বাসিন্দাদের আঞ্চলিক ভাবে গাজির পাইড়্যা ডাকে। যার ইংরেজি Gazirparian(গাজিরপাড়িয়ান) হওয়া যুক্তিযুক্ত।

  1. বি.দ্রঃ তথ্যগত কোন ভুল পরিলক্ষিত হলে বা অভিযোগ থাকলে সঠিক তথ্য উপস্থাপন সাপেক্ষে পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংশোধন যোগ্য।