খাদি কাপড়ের বিবর্তন
খাদির বিস্তার
মহাত্মা গান্ধী এর সময় খাদি কাপড়ের বিস্তার বাড়লে ও খাদির প্রচলন ছিলো আরো বহু আগে প্রাচীকাল থেকে। প্রাচীন সভ্যতা মহেন- জো- দারো সময় কালে হারাপ্পা অঞ্চলে তুলা দিয়ে হাতে বানানো কাপড় তৈরি হতো যা ছিলো আজকের খাদি। গ্রীক ঐতিহাসিকবিদ Strabo বলেছেন, আলেকজান্ডারের সময় গ্রীক আর্মি গরমের সময় এক ধরনের তুলার কাপড় পরতো যা অনেক আরাম ছিলো আর ঐ কাপড় টা ছিলো হাতা বুনা খাদি। (সে সময় ও কিন্তু পাতলা খাদি পাওয়া যেতো)। মৌর্য যুগে খাদি বিশেষ পরিচিতি ও প্রচারণা পায়। চাণক্য তার "অর্থশাস্ত্র" একটি শব্দ উল্লেখ করেছে "সূত্রাআধ্যাকশ্যা" যার অর্থ যে ব্যক্তি তুলা বা অন্য তন্তু থেকে হাত দিয়ে সুতা কাটতো, কাপড় বুনতো এবং এসব কাজের সাথে জড়িত ছিলো। আর এই বুনা কাপড়ের প্রভাব মৌর্য অর্থনীতির উপর ব্যপকভাবে ছিলো। আলেকজেন্ডার ও তার উত্তরাধিকার এশিয়া ও ইউরোপে উপমহাদেশীয় তুলা ও তুলার তৈরির কাপড়ের পরিচয় করায়। সেই প্রাচীনকাল থেকে উপমহাদেশীয় তুলা ও তুলার তৈরি কাপড় আন্তর্জাতিক ভাবে পরিচিত। এই কারণে মহাত্মা গান্ধী স্বদেশী আন্দোলনে খাদিকে দেশীয় পণ্য হিসাবে তুলে ধরে।
স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে খাদির সসম্পৃক্ততা
১৯২১ সালের দিকে মহাত্মা গান্ধী ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ডাক দেয়। যেখানে সকল প্রকার ব্রিটিশ পণ্য বর্জন করার ঘোষণা দেন। যা আমাদের গ্রামীণ কাপড় শিপ্লের জন্য পুনর্জাগরণ। কারণ খাদির ইতিহাস থেকে জানতে পারি উপমহাদেশে আগে কাপড় বুনন করা হতো চরকা, হাতে কাটা সুতা ও হাতে চালিত তাঁতের মাধ্যমে। এর মাঝে ১৮৫৪ সালে প্রথম তুলার কারখানা প্রতিষ্ঠা হয় মুম্বাইতে তৎকালীন বোম্বাইতে। সেই কারখানায় কাপড় বুনা শুরু হয় যা আমাদের হাতে বুলা কাপড় শিল্পকে বিধস্ত করে দেয়। কারখানায় তৈরি কাপড়ের সাথে ব্রিটিশ থেকে কাপড় আসা শুরু হয় যার ফলে শ্রমিকের মজুরি কমে যায়, তাঁতিরা কাপড় বুনা প্রায় ছেড়ে দেয় কারণ সবাই বিদেশী কাপড় পরা শুরু করে। তখন উপমহাদেশের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে স্বদেশী আন্দোলন যা আবার খাদি কে সবার কাছে পরিচিত করায়। কিন্ত জনপ্রিয়তা পায় ১৯১৫ সালের পরে ২১ এর দিকে কারণ মোটা কাপড় বলে অনেকেই খাদিকে গ্রহণ করতে চায় নি। তাই তো রজনীকান্ত সাহা মায়ের দেয়া মোটা কাপড় গান গান রচনা করেন। ১৯২১ এর দিকে খাদি ব্যপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এই জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ আর্থিক সচ্ছলত। তখন খাদি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের সাথে লক্ষ লক্ষ মানুষ জড়িত হয়। এর ফলে গ্রামীণ শিল্প বিকাশ হয় এবং মানুষ অর্থনৈতিক ভাবে মুক্ত হয়। তাই মহাত্মা গান্ধী খাদি কে অর্থনৈতিক মুক্তির প্রতীক হিসাবে ঘোষণা দেন। খাদির ব্যপক বিস্তারের ফলে ১৯২৩ সালে All India khadi Board গঠন করা যা পরবর্তীতে নিখিল ভারত চরকা সংঘ নামকরণ করা হয়। এভাবে খাদি স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে জড়িত হয়।