Talk:Mahendralal Sarkar
A fact from Mahendralal Sarkar appeared on Wikipedia's Main Page in the Did you know column on 26 April 2008, and was viewed approximately 433 times (disclaimer) (check views). The text of the entry was as follows:
|
This article is rated Start-class on Wikipedia's content assessment scale. It is of interest to the following WikiProjects: | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
|
In Bengali
editThis might contain useful information:
পঁচিশ দিনঃ ডঃ মহেন্দ্র লাল সরকার: যারা সুনীল গাঙ্গুলীর প্রথম আলো পড়েছেন, তাঁরা ডঃ মহেন্দ্র লাল সরকারকে ভাল করে চেনেন। তাঁর বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডাক্তারি পড়া আর বিজ্ঞান সাধনার জন্য ছেলে মেয়েদের উৎসাহ দেওয়া। আর বিয়ের নাম শুনলে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠা। ঠাকুর রামকৃষ্ণ দেবকে মুখের ওপর যা তা বলতে পারা, আবার ঠাকুরের জন্য আড়ালে চোখের জল ফেলা, বঙ্কিম চন্দ্রকে দেখতে গিয়ে, ওষুধ না দিয়ে চলে যাওয়া। এক অদ্ভুত চরিত্রের মানুষ, আজীবন বিজ্ঞান সাধক, ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশন অফ কালটিভেশন অফ সায়েন্স এর মত সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা। আজকের দিনে ‘বিজ্ঞান’ বলতে যে একবজ্ঞা ধারণা, তাকেই চ্যালেঞ্জ করে বসে তাঁর জীবন। একটি ঘটনা দিয়ে শুরু করি –
স্বামী বিবেকানন্দ যখন আমেরিকায় বেদান্তের কথা শুনিয়ে হাজার হাজার মানুষকে মুগ্ধ করছেন, তখন আরেক বাঙালি, তাঁর সদ্য আবিস্কৃত বেতার যন্ত্র নিয়ে লন্ডনে, গুটিকয় বিজ্ঞানীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। লন্ডনে কাগজে কাগজে তা নিয়ে ফলাও করে বেরিয়েছেও। তিনি জগদীশ চন্দ্র। কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দ কলকাতায় ফেরার সময় যে উদ্দীপনা বা সমালোচনা দুইই দেখা গেছিল, জগদীশ চন্দ্র যেদিন স্ত্রী অবলা বসুকে নিয়ে হাওড়া স্টেশনে পা দিলেন, তাঁকে সংবর্ধনা দেবার জন্য কেউ নেই। সাধারণ মানুষ অত বেতার টেতার বোঝে না। একজন ঠিক দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁর কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স এর গুটিকয় ছেলেকে নিয়ে, একগাছা মালা হাতে, তিনি ডঃ মহেন্দ্র লাল সরকার। জগদীশ আর অবলা তাঁর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলে, তিনি মাথায় হাত দিয়ে বললেন, ওই লাল মুখো টুপি অলারা ভাবে এদেশের লোক সব মুখ্যু, তারা আবার ফিজিক্স কি পড়বে। তুমি দেশের মুখ উজ্জ্বল করলে হে, তুমিই এদেশের বিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ। উকিল দুর্গা মোহনের মেয়ে অবলা, প্রথম মহিলা হিসেবে ডাক্তারি পড়তে চেয়েছিল। কিন্তু মেডিকেল কলেজে তখন মেয়েদের ডাক্তারি পড়ার স্থান নেই। মহেন্দ্রলাল তাঁকে মাদ্রাজে পাঠিয়ে দিলেন, তুই পড়, তোকে প্রথম মহিলা ডাক্তার হতেই হবে। সে কিন্তু কোর্স শেষ করতে পারল না। শরীর খারাপ হয়ে গেল। সেই সাথে জগদীশের সাথে বিয়েও ঠিক হয়ে গেছে। মহেন্দ্র লাল শুনে এই মারে তো সেই মারে, বিয়ে করে ঘরে বসে থাক, তোর মুখ দর্শন করব না। এখন সেই অবলার মাথায় হাত দিয়ে বললেন, কি গুখুরিটাই করেছিলুম, জগদীশকে দেখিস মা, ওকে অনেক কাজ করতে হবে। আরেক জন অবশ্য জগদীশকে অভিনন্দিত করতে এসেছিলেন, কিছু পরে, তাঁর বাড়িতে। জগদীশ তখন বাড়িতে ছিলেন না, একগোছা ম্যাগনোলিয়া ফুল আর এক টুকরো কাগজ রেখে তিনি চলে যান- কগজে লেখা – ‘বিজ্ঞান লক্ষ্মীর প্রিয় পশ্চিম মন্দিরে/ দূর সিন্ধু তীরে/ হে বন্ধু গিয়েছ তুমি। জয়মাল্য খানি/ সেথা হতে আনি/ দীনহীনা জননীর লজ্জানত শিরে/ পরায়েছ ধীরে।‘ নীচে সই, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
মহেন্দ্রলাল ১৮৩৩ সালে হাওড়ায় জন্মান, কিন্তু পাঁচ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে আর ন’বছর বয়সে মা’কে হারিয়ে মামার বাড়ি, কলকাতার নেবুতলায় বড় হন। হেয়ার স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে, প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু তিন বছর পড়ার পর তাঁর মনে হয়, তাঁর ডাক্তারি পড়া উচিত, তাই মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সেকেন্ড ইয়ারে পড়ার সময়ই তাঁর প্রতিভায়, উচ্ছ্বসিত শিক্ষকরা তাঁকে সহপাঠীদের একপ্রকার লেকচারার হিসেবে কাজে লাগিয়ে দেন। তিনিও অপটিকস নিয়ে সিরিজ অফ লেকচার দেন। ১৯৬৩ সালে তিনি এম ডি পাশ করেন। তিনি চন্দ্র কুমার দে’র পর কলকাতা মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় এম ডি। তিনি একজন নামী এলোপ্যাথ ডাক্তার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ব্রিটিশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের তিনি কলকাতার সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি ছিলেন, হোমিওপ্যাথীর ঘোর বিরোধী, হাতুড়ে চিকিৎসা বলে তিনি হোমিওপ্যাথীকে গাল পাড়তেন। তাঁর এই সমালোচনাকে ব্যবহার করার জন্য, মেডিকেল এসোসিয়েশনের জার্নালে, মরগান’স ফিলোজফি অফ হোমিওপ্যাথি নামে একটি বইয়ের রিভিউ তাঁকে লিখতে দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁর বিজ্ঞান নিষ্ঠ মন বলে, না পড়ে, সমালোচনা লেখা উচিত নয়। বইটি তিনি পড়ে ফেলেন। এবং এ বিষয়ে আরও জানতে, সে সময়ের নামী হোমিওপ্যাথি ডাক্তার, রাজেন্দ্র লাল দত্তের সাথে দেখা করেন। তাঁর চিকিৎসা পদ্ধতি দেখেন, নিজে হোমিও মেটেরিয়া মেডিকা পড়ে, চিকিৎসাও করেন, এবং রেজাল্ট দেখেন। অতঃপর ১৮৬৭ সালের মেডিকেল এসোসিয়েশনের এক সভায়, তিনি হোমিওপ্যাথিকে বিজ্ঞান বলে ঘোষণা করেন, এবং দেখান কিভাবে, বিদেশী চিকিৎসক এবং ফারমাসি কোম্পানীগুলি ষড়যন্ত্র করে, সস্তার হোমিও ওষুধকে এদেশের গরীব মানুষ থেকে দূরে রাখে। তাঁকে এসোসিয়েশন থেকে বের করে দেওয়া হয়। তিনিও পুরোপুরি হোমিওপ্যাথি প্রাকটিস শুরু করেন, এবং কলকাতার এক নম্বর ডাক্তার হয়ে ওঠেন।
তিনি বিজ্ঞান গবেষনার প্রসারের জন্য ভারতীয় বড়লোকদের সাহায্যে একটি গবেষণাগার তৈরির ওপর জোর দেন, ১৮৭০ সালে হিন্দু প্যাট্রিয়টের একটি নিবন্ধে। যেখানে এদেশীয় ছেলে মেয়েরা গবেষনা করতে পারবে। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে, বিদ্যাসাগর, দ্বারকানাথ, বঙ্কিম থেকে বহু মানুষ সাহায্য করেন, এবং গড়ে ওঠে কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স।আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, আশুতোষ মুখারজি, মেখনাদ সাহা থেকে শুরু করে, বহু বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ এসে এখানে টক দিয়েছেন। চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন আলোর প্রতিসরণের ওপর তাঁর আবিষ্কারের জন্য যে নোবেল পেয়েছিলেন, তার অনেকটা গবেষণা এখানে করা।
মহেন্দ্রলালকে অনেকে চেনেন রামকৃষ্ণের ডাক্তার হিসেবে। কট্টর নাস্তিক বা মিলিটান্ট এথেইস্ট মহেন্দ্রলালের সাথে ঠাকুরের সম্পর্ক ছিল নরমে গরমে। তিনি রামকৃষ্ণের সামনেই বলেছিলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, কালী একজন লড়াকু সাঁওতালী মাগী ছিল। সবাই এনার কথায় বিরক্ত, কেউ মনে মনে রেগে গেলেও, ঠাকুর মিটিমিটি হাসতেন। বলতেন, ওর ওপরটা অমন নারকেলের খোলের মত, ভেতরে শাঁস জল আছে। দেখবি একদিন প্রকাশ পাবে। কাশীপুর উদ্যানবাটীতে ঠাকুর তখন শয্যাশায়ী, ডাক্তার সরকার দুবেলা দেখে যান, ওষুধ পথ্যের ব্যবস্থা করে যান। দু কথা হয়। সেদিন সকাল সকাল চলে এসেছেন। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ল, ডাক্তার কোট প্যান্ট পরা মানুষ, মাটিতে বসতে পারেন না, চেয়ার দেওয়া হল। ঠাকুরকে জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছো? ঠাকুর বললেন, বেশ আছি। ডাক্তার বললেন, কাল সারারাত ঘুমুতে পারিনি। চোখ বুজলেই তোমার মুখটা ভেসে উঠছে। তাই সকাল বেলাতেই চলে এলুম। ঠাকুর হেসে বললেন, সে কি ডাক্তার, এতো তুমি প্রেমিকের কথা বলছ। নরেন হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান ধরেছে, ‘কতদিনে হবে সে প্রেম সঞ্চার/ হয়ে পূর্ণকাম বলব হরিনাম / নয়নে বহিবে প্রেম অশ্রুধার’। ডাক্তারের দু চোখ জলে ভেসে যাচ্ছে। অমন বাঘের মত মানুষ কেমন বিহ্বল হয়ে গেছেন। মাস্টার বলছে, ঠাকুর বলেন, ঈশ্বরের নামে যার চোখ দিয়ে জল পড়েছে, তার আর পুজো আচ্ছার দরকার নেই। ঠাকুর একবার তাকিয়ে বললেন, হ্যাঁ ডাক্তার, তোমার চোখে জল। ডাক্তার সিঁড়ি দিয়ে পায়ে পায়ে নেমে যাচ্ছেন, যেতে মন চাইছে না। অন্যদিন ধুপধাপ করে নামেন। আজ নামতে নামতে গিরিশের কাঁধে হাত দিয়ে বললেন, আমি অবতার টবতার জানিনে, তবে ইনি খাঁটি মানুষ। তবে আর সময় নেই গিরিশ। পরদিন যখন তাঁকে কল দেওয়া হল, তিনি এসে দেখলেন, যুগপুরুষ যুগান্তরে চলে গেছেন। হাতে গোনা কয়েক জনের সাথে তিনিও ঠাকুরের শবানুগমন করলেন চোখের জলে ভিজতে ভিজতে। সকলে অবাক, এই সেই ভয়ঙ্কর ডাক্তার সরকার? ঠাকুর তাঁর অহৈতুকি প্রেমে এঁকেও ভিজিয়ে দিয়ে গেলেন। Shubhrajit Sadhukhan (talk) 09:26, 18 April 2020 (UTC)